লেখক ঃ অপ্রস্তুত লেনিন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের এক্সিট বা বেরিয়ে যাওয়াকে বলা হচ্ছে ব্রেক্সিট। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার বিপক্ষে যারা ভোট দিয়েছে তারা হচ্ছে “লিভ গ্রুপ”। আর যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছে তারা হচ্ছে “রিমেইন গ্রুপ”। লিভ গ্রুপ ৫২% আর রিমেইন গ্রুপ ৪৮% ভোট পায়। যার ফলে ই-ইউ তে আর থাকা হচ্ছে না ব্রিটিশদের।
ব্রেক্সিট ইজ ডান! হোয়াট’স নেক্সট? নেক্সিট! ফ্রেক্সিট!!
নেক্সিট মানে নেদারল্যান্ডের ই-ইউ এক্সিট। ফ্রেক্সিট মানে ফ্রান্সের ই-ইউ এক্সিট। ব্রিটেনের পথ ধরে নেদারল্যান্ড, ফ্রান্সও একই পথে হাঁটার সম্ভাবনা প্রবল। উত্তপ্ত ইউরোপ। ১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়াল পতনের পর দুই জার্মানির একত্রীকরণের মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়, তার তিন বছর পরেই জন্ম লাভ করে ই-ইউ, যার পূর্ব নাম ছিল ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশন। আর ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশনের পূর্ব নাম ছিল “ইউরোপীয় ইস্পাত কয়লা গোষ্ঠী”!
দুটো বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়, বাড়তে থাকে নিজেদের ভিতর দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস। সে দ্বন্দ্ব অবিশ্বাস দূর করার জন্য প্রথমে উদ্যোগ নেয় ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি। নিজেদের ভেঙে পড়া অর্থনীতি দাঁড় করানোর জন্য এই চার দেশ মিলে গঠন করে “ইউরোপীয় ইস্পাত কয়লা গোষ্ঠী”। মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ৪টি দেশ বেশ লাভবান হয়, তার ফলাফল নেদারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গও যোগ দেয় এই জোটে। তখন ব্রিটেনের অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ ছিল, সাথে চলছিল অর্থনৈতিক মন্দা।
অস্থিতিশীল ছিল তেলের বাজার, মধপ্রাচ্যে অল্প কয়েকদিনে ঘটে যায় ৪ টা আরব-ইজরাইল যুদ্ধ। বাড়তে থাকে তেলের দাম। বড় বিপত্তি বাধে চতুর্থ আরব-ইজরাইল যুদ্ধের সময়, ভয়াভহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে শিল্পোন্নত দেশগুলো। সে সময় আরবের দেশগুলো ইজরাইলের বিরুদ্ধে দাবি আদায়ের জন্য “তেল অস্ত্র” প্রয়োগ করে। তেল অস্ত্র মানে তেল অবরোধ, উন্নত বিশ্বের কাছে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয় আরবের দেশগুলো, যাকে বলা হয় “তেল-অস্ত্র”। তাতে ক্ষতির মুখে পড়ে গোটা ইউরোপ সহ বিশ্বের অর্থনীতি।
ঠিক সে সময় ১৯৭৩ সালে ব্রিটেন গনভোট করে ই ইউ তে যোগদানের ব্যাপারে, তারপর তারা ই-ইউ তে যোগ দেয়। ক্রমান্বয়ে ব্রিটিশদের অর্থনীতি মন্দা থেকে বের হতে থাকে। তারপর নানা টালবাহানা শুরু করে, ই ইউ এর একক মুদ্রা ইউরো বেশিরভাগ দেশ চালু করলেও ব্রিটিশরা নিজেদের পাউন্ড স্টার্লিংই বহাল রাখে। মুক্ত সীমান্ত শেনজেন ভিসা সবাই গ্রহণ করলেও ব্রিটিশরা এসব কিছুর বাহিরে রেখেছে নিজেদের। আগা গোড়া টাউট বাটপার একটা জাতি। যখন দেখল তাঁদের অর্থনীতি ভালো হয়ে গেছে, তখন ই-ইউ থেকে নানা টালবাহানা অজুহাত দেখিয়ে বাকি দেশগুলোকে বিপদে রেখে নিজেরা বের হয়ে গেছে।
বাকি ২৭ সদস্যের উপর এখন বিপদ যাবে, সন্ত্রাসী হামলা, শরণার্থী সংকট ই-ইউ এর বাকি রাষ্ট্রদের সামাল দিতে হবে। অথচ ব্রিটিশরা মিথ্যা অভিযোগে আমেরিকার সাথে লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়াতে হামলা করে মানুষের ঘর বাড়ি ধ্বংস করছে, এখন সেই মানুষরা যখন ঘর বাড়ি ছেড়ে ইউরোপমুখে যাত্রা করছে, তখন ব্রিটিশরা চিন্তা করল এই ঝামেলা নিজের কাঁধে আসার আগেই ই-ইউ ছাড়তে হবে। এখন সবাইকে বিপদের মুখে রেখে নিজেরাই সরে পড়ছে। বদমাশ একটা জাতি।
ছাড়ার আগে যুক্তি দেখাইছে, ২০১৫ সালে ই-ইউ বাজেটে ব্রিটেনের ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড দিতে হইছে। এভাবে প্রতি বছর অনেক টাকা খরচ হয় ব্রিটেনের, যা তাঁদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। তাহলে তখন গনভোট করে ই-ইউ তে ঢুকছিলা কেন? ব্যাটা চিটার!
ইউরোপীয়রা কি পরিমাণ অসভ্য তার বড় দৃষ্টান্ত ব্রিটিশরা। পৃথিবীর নানা দেশ দখল করে, আক্রমণ করে, উপনিবেশ করে, শাসন শোষণ করে, এখন অভিবাসী আইনের কথা বলে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। ইউরোপ আমাদের সভ্য বানাবে কি, এরা পৃথিবীর বড় অসভ্য। একটা উদাহরণ দিলেই বুঝা যাবে, শরণার্থী সংকট নিয়ে কয়েকদিন আগে স্লোভাকিয়া সরকার বলেছে- খৃস্টান ধর্ম গ্রহণে সম্মত হলে তারা কোটার ভিত্তিতে ২০০ জন অভিবাসীকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছে। এই ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, রেসিস্ট ইউরোপ আমাদের সেকুলার হইতে বলে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে। অথচ এরা নিজেরাই এসবে বিশ্বাস করে না।
ব্রিটিশরা বের হয়ে গেলে সব শেষ না, এখান থেকে নতুন একটা বিশ্ব ব্যবস্থা শুরু হবে। ব্রিটেনের দেখাদেখি অনেক দেশই ই-ইউ ত্যাগ করবে। লাভের গুঁড় খাবে ভ্লাদিমির পুতিন, যদিও সে আজকের অবস্থার জন্য দায়ী না কিন্তু পুতিন সব চেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারি। কারণ ব্রিটেন বের হয়ে যাওয়ায় ই-ইউ দুর্বল হয়ে গেছে, আরও অনেক দেশই ই-ইউ ছাড়ার পক্ষে। এখন রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মত বড় প্রতিপক্ষ আর রইল না। ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং সহ ইউরো মুদ্রার দাম কমে গেছে, পুতিন এখন রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম বাড়াবে, পুতিনের সামনে খোলা আছে ইউরেশিয়া অর্থনৈতিক জোট, সাংহাই সহযোগিতা কর্পোরেশন জোট এবং ব্রিকস ব্যাংক নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। ইরানও হাফ ছেড়ে বাচলো, অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে পড়ার সম্ভাবনা নেই। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়া-ইরান-সিরিয়া জোট আরও শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশের জন্যও লাভ আছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে যারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাতে নালিশ করতো তারা আজকে এতিম হয়ে গেছে। এখন সেই জায়গাটা বন্ধ হয়ে গেছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন ছিল। সাথে পুতিনের ইউরেশিয়া জোটে বাংলাদেশ যুক্ত হয়ে বেশি লাভবান হতে পারে। রাশিয়াতে বাংলাদেশের হাজার কোটির উপর গার্মেন্টসের বাজার আছে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যে শুল্ক কমাতে পারলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩৫ থেকে ৪০ বিলিয়ন হতে খুব বেশি দিন লাগবে না।
ব্রিটেনের ই-ইউ ত্যাগের সব চেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারি হবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ইউরোপের মৌলবাদীরা। তারা এখন আরও জোরে বলবে, দেখ ব্রিটিশরা সীমান্ত বন্ধ করে দিছে, এক ঘরে হয়ে গেছে নিরাপত্তার জন্য, আমেরিকার সীমান্ত বন্ধ করে দিতে হবে, মুসলমানদের জন্য দেয়াল বানাইতে হবে, নজরদারি করতে হবে। এভাবে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হবে, বহুত্ববাদী সমাজ হুমকির মুখে পড়বে। শুরু হবে আরেকটা তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ।
ব্রিটেনের ই-ইউ থেকে বিদায় বিশ্বের মানচিত্রে আরও নতুন কয়েকটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ভূখন্ডের আত্মপ্রকাশে সাহায্য করবে। গণভোটের কয়েক ঘণ্টা পর স্কটল্যান্ডের কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন স্বাধীনতার পক্ষে আবার গণভোটের ডাক দিয়েছে, তারা ব্রিটিশদের সাথে আর থাকবে না।আয়ারল্যান্ডও ব্রিটিশদের সাথে থাকবে না, হয়ত দুটো স্বাধীন আয়ারল্যান্ড হবে অথবা দুই আয়ারল্যান্ড এক হয়ে যাবে।
ব্রিটিশরা উপনিবেশ গড়তো বিশ্বের নানা প্রান্তে, তারপর ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি এপ্লাই করে শাসন করতো। এভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে গড়ে তোলে, নিজেদের নাম দেয় গ্রেট ব্রিটেন। কিন্তু আজ ব্রিটিশরা নিজেরাই ডিভাইড এন্ড রুল পলিসির শিকার। গ্রেট ব্রিটেন হয়ে যাবে শুধু ব্রিটেন, ডিভাইড হবে স্কটল্যান্ড,আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েলস। ব্রিটিশদের জাতীয় সঙ্গীত “গড সেভ দা কুইন”। গড তাঁদের রাণীকে এখনো বাঁচাইয়া রাখছে, এলিজাবেথের বর্তমান বয়স ৯০। কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বাঁচাইয়া রাখে নি। রাণী দেখে গেল সে বাইচা আছে তার গ্রেট ব্রিটেন বাইচা নাই।
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, ব্রিটিশদেরও না। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশরা কেড়ে নেয় বাংলার স্বাধীনতা, তারপর ২০০ বছর শাসনের নামে শোষণ করে দাস বানিয়ে রাখে। আজ ২০১৬ সালের ২৩ জুন বিশ্ব দেখল গ্রেট ব্রিটেনের অবশ্যম্ভাবী পতন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ছিল বৃহস্পতিবার, ২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রিটেনের গণভোটের দিন ও ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন স্বাধীন বাংলার পতন হয়, আজ ব্রিটিশ কলোনির পতন।
প্রজেক্ট লেনিন।
৬/২৫/২০১৬।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের এক্সিট বা বেরিয়ে যাওয়াকে বলা হচ্ছে ব্রেক্সিট। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার বিপক্ষে যারা ভোট দিয়েছে তারা হচ্ছে “লিভ গ্রুপ”। আর যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছে তারা হচ্ছে “রিমেইন গ্রুপ”। লিভ গ্রুপ ৫২% আর রিমেইন গ্রুপ ৪৮% ভোট পায়। যার ফলে ই-ইউ তে আর থাকা হচ্ছে না ব্রিটিশদের।
ব্রেক্সিট ইজ ডান! হোয়াট’স নেক্সট? নেক্সিট! ফ্রেক্সিট!!
নেক্সিট মানে নেদারল্যান্ডের ই-ইউ এক্সিট। ফ্রেক্সিট মানে ফ্রান্সের ই-ইউ এক্সিট। ব্রিটেনের পথ ধরে নেদারল্যান্ড, ফ্রান্সও একই পথে হাঁটার সম্ভাবনা প্রবল। উত্তপ্ত ইউরোপ। ১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়াল পতনের পর দুই জার্মানির একত্রীকরণের মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়, তার তিন বছর পরেই জন্ম লাভ করে ই-ইউ, যার পূর্ব নাম ছিল ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশন। আর ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশনের পূর্ব নাম ছিল “ইউরোপীয় ইস্পাত কয়লা গোষ্ঠী”!
দুটো বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়, বাড়তে থাকে নিজেদের ভিতর দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস। সে দ্বন্দ্ব অবিশ্বাস দূর করার জন্য প্রথমে উদ্যোগ নেয় ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি। নিজেদের ভেঙে পড়া অর্থনীতি দাঁড় করানোর জন্য এই চার দেশ মিলে গঠন করে “ইউরোপীয় ইস্পাত কয়লা গোষ্ঠী”। মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ৪টি দেশ বেশ লাভবান হয়, তার ফলাফল নেদারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গও যোগ দেয় এই জোটে। তখন ব্রিটেনের অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ ছিল, সাথে চলছিল অর্থনৈতিক মন্দা।
অস্থিতিশীল ছিল তেলের বাজার, মধপ্রাচ্যে অল্প কয়েকদিনে ঘটে যায় ৪ টা আরব-ইজরাইল যুদ্ধ। বাড়তে থাকে তেলের দাম। বড় বিপত্তি বাধে চতুর্থ আরব-ইজরাইল যুদ্ধের সময়, ভয়াভহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে শিল্পোন্নত দেশগুলো। সে সময় আরবের দেশগুলো ইজরাইলের বিরুদ্ধে দাবি আদায়ের জন্য “তেল অস্ত্র” প্রয়োগ করে। তেল অস্ত্র মানে তেল অবরোধ, উন্নত বিশ্বের কাছে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয় আরবের দেশগুলো, যাকে বলা হয় “তেল-অস্ত্র”। তাতে ক্ষতির মুখে পড়ে গোটা ইউরোপ সহ বিশ্বের অর্থনীতি।
ঠিক সে সময় ১৯৭৩ সালে ব্রিটেন গনভোট করে ই ইউ তে যোগদানের ব্যাপারে, তারপর তারা ই-ইউ তে যোগ দেয়। ক্রমান্বয়ে ব্রিটিশদের অর্থনীতি মন্দা থেকে বের হতে থাকে। তারপর নানা টালবাহানা শুরু করে, ই ইউ এর একক মুদ্রা ইউরো বেশিরভাগ দেশ চালু করলেও ব্রিটিশরা নিজেদের পাউন্ড স্টার্লিংই বহাল রাখে। মুক্ত সীমান্ত শেনজেন ভিসা সবাই গ্রহণ করলেও ব্রিটিশরা এসব কিছুর বাহিরে রেখেছে নিজেদের। আগা গোড়া টাউট বাটপার একটা জাতি। যখন দেখল তাঁদের অর্থনীতি ভালো হয়ে গেছে, তখন ই-ইউ থেকে নানা টালবাহানা অজুহাত দেখিয়ে বাকি দেশগুলোকে বিপদে রেখে নিজেরা বের হয়ে গেছে।
বাকি ২৭ সদস্যের উপর এখন বিপদ যাবে, সন্ত্রাসী হামলা, শরণার্থী সংকট ই-ইউ এর বাকি রাষ্ট্রদের সামাল দিতে হবে। অথচ ব্রিটিশরা মিথ্যা অভিযোগে আমেরিকার সাথে লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়াতে হামলা করে মানুষের ঘর বাড়ি ধ্বংস করছে, এখন সেই মানুষরা যখন ঘর বাড়ি ছেড়ে ইউরোপমুখে যাত্রা করছে, তখন ব্রিটিশরা চিন্তা করল এই ঝামেলা নিজের কাঁধে আসার আগেই ই-ইউ ছাড়তে হবে। এখন সবাইকে বিপদের মুখে রেখে নিজেরাই সরে পড়ছে। বদমাশ একটা জাতি।
ছাড়ার আগে যুক্তি দেখাইছে, ২০১৫ সালে ই-ইউ বাজেটে ব্রিটেনের ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড দিতে হইছে। এভাবে প্রতি বছর অনেক টাকা খরচ হয় ব্রিটেনের, যা তাঁদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। তাহলে তখন গনভোট করে ই-ইউ তে ঢুকছিলা কেন? ব্যাটা চিটার!
ইউরোপীয়রা কি পরিমাণ অসভ্য তার বড় দৃষ্টান্ত ব্রিটিশরা। পৃথিবীর নানা দেশ দখল করে, আক্রমণ করে, উপনিবেশ করে, শাসন শোষণ করে, এখন অভিবাসী আইনের কথা বলে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। ইউরোপ আমাদের সভ্য বানাবে কি, এরা পৃথিবীর বড় অসভ্য। একটা উদাহরণ দিলেই বুঝা যাবে, শরণার্থী সংকট নিয়ে কয়েকদিন আগে স্লোভাকিয়া সরকার বলেছে- খৃস্টান ধর্ম গ্রহণে সম্মত হলে তারা কোটার ভিত্তিতে ২০০ জন অভিবাসীকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছে। এই ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, রেসিস্ট ইউরোপ আমাদের সেকুলার হইতে বলে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে। অথচ এরা নিজেরাই এসবে বিশ্বাস করে না।
ব্রিটিশরা বের হয়ে গেলে সব শেষ না, এখান থেকে নতুন একটা বিশ্ব ব্যবস্থা শুরু হবে। ব্রিটেনের দেখাদেখি অনেক দেশই ই-ইউ ত্যাগ করবে। লাভের গুঁড় খাবে ভ্লাদিমির পুতিন, যদিও সে আজকের অবস্থার জন্য দায়ী না কিন্তু পুতিন সব চেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারি। কারণ ব্রিটেন বের হয়ে যাওয়ায় ই-ইউ দুর্বল হয়ে গেছে, আরও অনেক দেশই ই-ইউ ছাড়ার পক্ষে। এখন রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মত বড় প্রতিপক্ষ আর রইল না। ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং সহ ইউরো মুদ্রার দাম কমে গেছে, পুতিন এখন রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম বাড়াবে, পুতিনের সামনে খোলা আছে ইউরেশিয়া অর্থনৈতিক জোট, সাংহাই সহযোগিতা কর্পোরেশন জোট এবং ব্রিকস ব্যাংক নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। ইরানও হাফ ছেড়ে বাচলো, অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে পড়ার সম্ভাবনা নেই। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়া-ইরান-সিরিয়া জোট আরও শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশের জন্যও লাভ আছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে যারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাতে নালিশ করতো তারা আজকে এতিম হয়ে গেছে। এখন সেই জায়গাটা বন্ধ হয়ে গেছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন ছিল। সাথে পুতিনের ইউরেশিয়া জোটে বাংলাদেশ যুক্ত হয়ে বেশি লাভবান হতে পারে। রাশিয়াতে বাংলাদেশের হাজার কোটির উপর গার্মেন্টসের বাজার আছে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যে শুল্ক কমাতে পারলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩৫ থেকে ৪০ বিলিয়ন হতে খুব বেশি দিন লাগবে না।
ব্রিটেনের ই-ইউ ত্যাগের সব চেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারি হবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ইউরোপের মৌলবাদীরা। তারা এখন আরও জোরে বলবে, দেখ ব্রিটিশরা সীমান্ত বন্ধ করে দিছে, এক ঘরে হয়ে গেছে নিরাপত্তার জন্য, আমেরিকার সীমান্ত বন্ধ করে দিতে হবে, মুসলমানদের জন্য দেয়াল বানাইতে হবে, নজরদারি করতে হবে। এভাবে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হবে, বহুত্ববাদী সমাজ হুমকির মুখে পড়বে। শুরু হবে আরেকটা তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ।
ব্রিটেনের ই-ইউ থেকে বিদায় বিশ্বের মানচিত্রে আরও নতুন কয়েকটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ভূখন্ডের আত্মপ্রকাশে সাহায্য করবে। গণভোটের কয়েক ঘণ্টা পর স্কটল্যান্ডের কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন স্বাধীনতার পক্ষে আবার গণভোটের ডাক দিয়েছে, তারা ব্রিটিশদের সাথে আর থাকবে না।আয়ারল্যান্ডও ব্রিটিশদের সাথে থাকবে না, হয়ত দুটো স্বাধীন আয়ারল্যান্ড হবে অথবা দুই আয়ারল্যান্ড এক হয়ে যাবে।
ব্রিটিশরা উপনিবেশ গড়তো বিশ্বের নানা প্রান্তে, তারপর ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি এপ্লাই করে শাসন করতো। এভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে গড়ে তোলে, নিজেদের নাম দেয় গ্রেট ব্রিটেন। কিন্তু আজ ব্রিটিশরা নিজেরাই ডিভাইড এন্ড রুল পলিসির শিকার। গ্রেট ব্রিটেন হয়ে যাবে শুধু ব্রিটেন, ডিভাইড হবে স্কটল্যান্ড,আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েলস। ব্রিটিশদের জাতীয় সঙ্গীত “গড সেভ দা কুইন”। গড তাঁদের রাণীকে এখনো বাঁচাইয়া রাখছে, এলিজাবেথের বর্তমান বয়স ৯০। কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বাঁচাইয়া রাখে নি। রাণী দেখে গেল সে বাইচা আছে তার গ্রেট ব্রিটেন বাইচা নাই।
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, ব্রিটিশদেরও না। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশরা কেড়ে নেয় বাংলার স্বাধীনতা, তারপর ২০০ বছর শাসনের নামে শোষণ করে দাস বানিয়ে রাখে। আজ ২০১৬ সালের ২৩ জুন বিশ্ব দেখল গ্রেট ব্রিটেনের অবশ্যম্ভাবী পতন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ছিল বৃহস্পতিবার, ২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রিটেনের গণভোটের দিন ও ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন স্বাধীন বাংলার পতন হয়, আজ ব্রিটিশ কলোনির পতন।
প্রজেক্ট লেনিন।
৬/২৫/২০১৬।
No comments:
Post a Comment